শীতকালে এমনকি কিভাবে সুস্থ থাকবেন

Winter health care tips for children in bengali
Winter health care tips for children in bengali

মনোরম শীতের মরসুম উপভোগ করতে চাইলে এই মরশুমে আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশেষ ওয়াকিবহাল হোন । এই মৌসুমে স্বাস্থ্য সমস্যা কি হতে পারে তা সম্পর্কে আপনার সম্যক অবগত থাকা উচিত । আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কথা, যাতে ঠান্ডা মরসুমের সঙ্গে মানুষের বিশেষ সাবধান থাকা উচিত ।

উচ্চ রক্তচাপের রোগী হতে সাবধানে থাকুন

এই মরসুমের তাপমাত্রা উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত । বিজ্ঞানীদের পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, শীতের মৌসুমে 33 শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ থাকে । তাই এই মৌসুমে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত । শীতের মৌসুমে এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি এমন কিছু হরমোন উৎপন্ন করে যা রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য দায়ী । অতএব, উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের এই বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:

১. খাবারে সামান্য লবণ হিসেবে ব্যবহার করুন এবং যত দূর সম্ভব ভাজা খাবার, সবজি, টিনজাত খাবার, অ্যালকোহল ও সিগারেট পরিহার করার চেষ্টা করুন ।

২. আপনার বিএমএস (বডি মাস ইনডেক্স) অনুযায়ী আপনার ওজন ব্যালান্স করার চেষ্টা করুন । চেষ্টা করুন যতদূর সম্ভব নিজেকে সচল রাখতে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে ।

৩. ওজন কমাতে কখনোই ক্র্যাশ ডায়েটিং করবেন না । এতে আপনার স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে ।

৪. বাইরে ঠাণ্ডা হলে সকালের পরিবর্তে সন্ধ্যায় হাঁটার জন্য যান ।

৫. যত বেশি তাজা ফল ও সবজি খাবেন, ওজন বৃদ্ধি না করে শরীর সুস্থ রাখুন ।

হার্টের রোগীদের এই মরশুমে অতিরিক্ত সাবধান থাকা উচিত, কারণ এই ঋতুতে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি । ঠান্ডা এই মৌসুমে হৃদযন্ত্রের রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়ে যায়, যার ফলে তাদের কার্যকলাপ হ্রাস হয় । হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় । অতএব, হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:

১. যতদূর সম্ভব ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করুন । শীতের মরশুমে পনেরো থেকে কুড়ি দিন, খুব কম দিন থাকে যখন তাপমাত্রা খুব কমে যায় । এমন পরিস্থিতিতে হার্টের রোগীরা যেন মর্নিং ওয়াকে বাড়ি থেকে বের না হন ।

২. মনোরম শীতের মরশুমে পার্টি আর পিকনিক লেগেই থাকে । এই প্রায়ই অত্যধিক খাওয়া বাড়ে এবং অনেক সময় মানুষ আরও বেশি অ্যালকোহল, ঘি-তেলতেল বা আমিষ খেতে পারেন, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় । অতএব, এই ধরনের ঋতু সময় একটি সহজ এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত ।

৩. প্রতিদিন আধ ঘণ্টা রোদে বসুন । কারণ সূর্যরশ্মির মধ্যে থাকা ভিটামিন ডি আমাদের শরীরকে হার্ট অ্যাটাকের হাত থেকে রক্ষা করে ।

৪. জরিপ করে প্রমাণিত হয়েছে যে, শীতের মৌসুমে মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা বৃদ্ধি পায় । তাই হার্টের রোগীদের এই মৌসুমে একাকীত্ব ও মানসিক চাপ এড়ানোর চেষ্টা করা উচিত ।

৫. নিয়মিত ওষুধ নিন এবং মেডিক্যাল চেকআপ করুন ।

শীতকালে হাঁপানি রোগীদের জন্য

এটি শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমে অ্যালার্জি, যা ঠান্ডা বা ঋতু পরিবর্তনের সময় বৃদ্ধি পায় । যে কোনও বয়সেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাই আপনি বা আপনার পরিবারের সদস্যের এই সমস্যা থাকলে অবশ্যই এই বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন:

১. শীতের মৌসুমে বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত ধূলিকণা ও ট্রেনগুলির ধোঁয়ায় পুরু কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, যা স্লারস । এই দূষণ হাঁপানি রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক বলে প্রমাণিত হয় । তাই এই মরসুমের সময় অফিসে যাওয়ার সময় গাড়ির কাচ সব সময় বন্ধ রাখুন ।

২. এ মৌসুমের শুষ্ক জলবায়ু অ্যাজমা রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক বলে প্রমাণিত হয় এবং বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা না থাকায় তারা শ্বাস নিতে অসুবিধা বোধ করে । এ ধরনের সমস্যা থাকলে ঘরে থাকা সব জানালা বন্ধ করে বা ঘরের উনুন বা আপনার ঘরে চলমান করে রাতে ঘুমাবেন না । এর ফলে ঘরের পরিবেশে প্রাকৃতিক অক্সিজেন ক্ষয় হতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে ।

  1. জীবাণুসৃষ্টিকারী স্প্রে, ধূপ ধোঁয়া, মসলা হাঁচি গন্ধ, ইত্যাদি এর প্রভাব শ্বাসযন্ত্রের শ্বাসনালির পেশী সঙ্কুচিত ও সঙ্কুচিত করে, শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে । তাই এই ধরনের জিনিস এড়িয়ে চলুন এবং রান্নাঘরে চিমনি ইনস্টল করুন ।

৪. যত দূর সম্ভব আপনার প্রতিদিনের ক্যাটারিং-এ ভেষজ চা ও স্যুপ অন্তর্ভুক্ত করুন । এতে আপনাকে অনেক আরাম দেবে ।

৫. ঘুমানোর সময় রাতে হঠাৎ কাশি হওয়ার পর যদি ঘুম ভেঙে যায় তাহলে ভয় পাবেন না । কিছুক্ষণ খোলা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে । সবসময় আপনার সাথে একটি নেবুলাইজার রাখুন যাতে প্রয়োজন হলে অবিলম্বে এটি ব্যবহার করতে পারেন । প্রাথমিক চিকিৎসার পর বিশ্রাম না পেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।

বাচ্চাদের জন্য সাবধানতা

শীতের মরশুমে শিশুদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন । ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া এই মৌসুমে খুব সক্রিয় এবং শিশুদের অনাক্রম্যতা সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয় না । তাই এই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস শিশুর শরীরে খুব দ্রুত আক্রমণ করে । এর ফলে তার শরীরে অ্যান্টিবডি ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ে । এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সর্দি, বন্ধ নাক, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, গলা ও কানের সংক্রমণের মতো সমস্যা দেখা দেয় । এই সমস্যাগুলি থেকে আপনার সন্তানকে রক্ষা করতে, মাথায় রাখুন:

১. যদি ঠান্ডার কারণে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এক গ্লাস পানি ফুটিয়ে তা ঠান্ডা করে 1/4 চা চামচ লবণ দিয়ে ঠাণ্ডা করে দুই ফোঁটা পানি ড্র্যাগন দিয়ে নাড়ুন । এতে তার নাক খোলা হবে ।

২. এমন সমস্যা ঘটলে একটি শিশুকে স্টেমিং করাও উপকারী ।

৩. স্নানের পর সঙ্গে সঙ্গে খোলা বাতাসে শিশুকে নিয়ে নেবেন না । এর ফলে সর্দি হতে পারে ।

৪. মুরগির মাংস, ডিম, ড্রাই ফ্রুটস, জিনিসের মতো গরম গন্ধযুক্ত জিনিস দিয়ে শিশুদের যতদূর সম্ভব খাওয়ান । এই ঠাণ্ডা লড়াই তাদের শরীরের শক্তি দেয় ।

৫. শিশুর সর্দি বা জ্বর হলে দেরি না করে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান ।

বয়স্কদের জন্য সাবধানতা

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । সে কারণে বয়স্কদের প্রায়ই শীতের সময় নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । তাই এই মৌসুমে বয়স্কদের অবশ্যই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে:

১. যত দূর সম্ভব ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলুন ।

২. নিয়মিত কমলালেবু, আপেল, পালিকেমত ইত্যাদি ফল খান । কারণ এদের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ।

৩. প্রতিদিনের খাবারে স্যুপ অন্তর্ভুক্ত করুন ।

৪. নিয়মিত সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন ।

৫. এই মৌসুমে জয়েন্টের ব্যথা, কাশি ও উচ্চ রক্তচাপের মতো বয়স্কদের সমস্যা বৃদ্ধি পায় । তাই, তাদের মেডিকেল চেকআপের নিয়মিত করা উচিত ।

ওপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে ঠাণ্ডা উপভোগ করতে পারেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন ।