প্রোটিন রিলেটেড ডিজিজ এবং তাদের সমাধান

প্রোটিনের অভাব বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা, যার মধ্যে কিছু উপসর্গ এবং চিকিত্সা দ্বারা চিহ্নিত করা হয় ।

সুস্থ শরীর থাকাটা কতটা জরুরি তা আমরা সকলেই জানি । কিন্তু একা খাওয়া সুস্থ ও সুস্থ জীবনে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই । বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শরীরে পুষ্টির যোগান ।

সেই কারণেই তো আমাদের খাবারে এই সব জিনিস খেয়াল রাখা উচিত যে আমাদের শরীর সব পুষ্টি পাচ্ছে কি না । প্রোটিন অপরিহার্য পুষ্টিগুণেও অন্যতম ।

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ত্বক, রক্ত, পেশী ও হাড়ের কোষের বিকাশের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য ।

প্রোটিন আমাদের শরীরে এনার্জির উৎস । ছোট হোক বা বুড়ো, সকলের জন্যই প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । গর্ভবতী মহিলাদেরও প্রচুর প্রোটিনের প্রয়োজন হয়, কারণ এটি নতুন কোষ বানাতে সাহায্য করে । এতে চিনেরও পুনঃনির্মাতা হয় । প্রোটিন তাই খাদ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করা হয় ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন ব্যক্তির প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের এক গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন, অর্থাৎ ওজন 50 কেজি হলে, 50 গ্রাম প্রোটিন রোজ প্রয়োজন হয় ।

অন্যদিকে শরীরে প্রোটিনের অভাব থাকলে তা অন্য মস্তিষ্কের আরও অনেক কারণেও হতে পারে । প্রোটিনের অভাবে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে । চুলের ক্ষতি, পেশির দুর্বলতার মতো বহু উপসর্গ দেখা দেয় প্রোটিনের অভাবে ।

তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক প্রোটিনের অভাবে কী কী উপসর্গ এবং রোগ সৃষ্টি হয় ।

  1. স্প্ল্যাহীনতা

আপনি যদি স্লেপরোগে আক্রান্ত হন, তাহলে আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অভাব হতে পারে । কারণ আমাদের শরীরের পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রয়োজন এবং একই পুষ্টির অভাব শরীরে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে ।

একইভাবে শরীরে প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে শিকার ঘুম পায় না । প্রোটিনের অভাব শরীরে হরমোন ভারসাম্যহীন করে তোলে এবং আমাদের ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে ।

আরও পড়ুন: প্রসবের পর মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভাল ঘুম অপরিহার্য ।

২. পেশী ব্যাথা

শরীরের প্রতিটি অংশের নিজস্ব ফাংশন রয়েছে । একই ভাবে শরীরে সঠিক পেশি থাকা অত্যন্ত জরুরি । অনেকেই অনেক সময় পেশির ব্যথার অভিযোগ তোলেন । এই লক্ষণগুলি শরীরে প্রোটিনের অভাবে কারণেও হতে পারে ।

কারণ প্রোটিন পেশির জ্বালানি হিসেবে কাজ করে । শরীরে প্রোটিনের অভাব থাকলে তা পেশির ক্ষতি করে এবং পেশির ব্যথার অভিযোগ বাড়ে । অতএব, দৈনন্দিন খাবারে একটি যথেষ্ট প্রোটিন খাওয়া উচিত ।

৩. ওজন বৃদ্ধি

ওজন বৃদ্ধি আজকাল সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । ওজন বাড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হল শরীরে প্রোটিনের অভাব । প্রোটিন আমাদের শরীরে খাবার হজম করতে সাহায্য করে । শরীরে প্রোটিনের উপাদান কম থাকলে তা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে । এর ফলে আমাদের শরীরে চর্বি জমা ও ওজন বৃদ্ধি পায় ।

৪. দুর্বল নখ

আমাদের নখ দিয়ে তৈরি হয় কেরোটিন নামে একটি প্রোটিন, তাই নখ শক্ত রাখতে শরীরে সঠিক প্রোটিনের উপাদান থাকা অত্যন্ত জরুরি । কম প্রোটিনের মাত্রা নখ দুর্বল করে দ্রুত ভেঙে যায় । প্রোটিনের অভাবে নখের ক্ষেত্রেও সাদা ছোপ সৃষ্টি হয় ।

৫. চুলের ক্ষতি

আমাদের চুলের ক্ষেত্রেও ক্যারটিন নামে একটি প্রোটিন থাকে । যা আমাদের চুলকে মজবুত করে । প্রোটিনের অভাবে চুলকে যথেষ্ট প্রোটিন পেতে সাহায্য করে না । এর পরেই চুল পড়ার সমস্যা । আপনার চুল খুব বেশি হলে আপনার শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হতে পারে ।

৬. মনকে দুর্বল করে

প্রোটিন ও মস্তিষ্কে উভয়ের পরস্পরের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক রয়েছে । ডাক্তাররা বলছেন, যে কোনও সুস্থ স্নায়ুবিক কাজের জন্য প্রোটিন খুবই জরুরি । মস্তিষ্কের নিউরন নিউরোট্রান্সমিটারের প্রোটিন দিয়ে তৈরি, তাই শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে আমাদের মস্তিষ্কও দুর্বল হয়ে পড়ে । মনের কার্যকারিতায় অসুবিধা হয় ।

৭ ।

অনিয়মিত মাসিক চক্র

মহিলাদের মধ্যে ঋতুচক্রের অনিয়ম শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার দিকেও নির্দেশ দেয় । প্রোটিনের অভাবে মহিলাদের ঋতুচক্রে নানা সমস্যাও সৃষ্টি হয় । শরীরে প্রোটিনের অভাব থাকায় অনেক হরমোনও ভারসাম্যহীন হয়ে যায় এবং মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুচক্রের সম্মুখীন হতে হয় ।

৮. ক্লান্তি ও মুড চেঞ্জ সমস্যা

শরীরে পুষ্টি জোগায় আমাদের এনার্জি । প্রোটিনের অভাবে শরীরে ক্লান্তিও সৃষ্টি হতে পারে এবং আমাদের মেজাজের উপর বিরূপ প্রভাব পরে । প্রোটিনের অভাবের কারণে আমাদের মুড সোদশ । প্রোটিনের অভাবে শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, যা আমাদের মেজাজের উপরও প্রভাব ফেলে । প্রোটিনের অভাব কারণ মানুষেরা কিছু করতে পছন্দ করেন না এবং সবসময় মুড সোয়াইপ করার সমস্যা হয় ।

৯. গাম ডিজিজ

গাম রোগ সাধারণ, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গাম সমস্যা শরীরে প্রোটিনের অভাবের কারণে হতে পারে । 35 বয়স হওয়ার পর জিনক্যান সমস্যা বেড়ে যায় । আর এই বয়সেই শরীরে প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে প্রতি চারজনের মধ্যে তিন জনের গাম সমস্যা দেখা দেয় । প্রতিদিন 1000 মিলিগ্রাম প্রোটিন খেলে গাম সমস্যা হ্রাস পায় ।

১০. জাঙ্ক ফুড খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা

যদি আপনার মনও জাঙ্ক ফুড, চকলেট এবং কোল্ড ড্রিঙ্কে খুব বেশি যায়, তাহলে আপনার শরীরে প্রোটিন ডেফিসিয়েন্সি সমস্যাও হতে পারে । কারণ শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে এই জিনিসগুলি খাওয়ার বেশি বাসনা থাকে । অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে আমাদের মাইন্ড নাও বেশি । জাঙ্ক ফুড কিন্তু এই দিন মানুষের শখ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

আমাদের শরীরের জন্য সঠিক পরিমাণ প্রোটিন কতটা প্রয়োজন, তা নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন । আমাদের শরীরের মস্তিষ্ক থেকে পাচনতন্ত্র পর্যন্ত প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । প্রতিদিনের খাবারে সঠিক পরিমাণে প্রোটিন খেতে হবে ।

তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কী কী খাবার খেলে আমাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর করতে পারে ।
১. দুধ, দই ও টোম্যাটো

দুধ থেকে তৈরি সব খাবারেই প্রোটিন প্রচুর পরিমাণে থাকে । দুধ, দই ও টোম্যাটো প্রোটিনের ভাল উৎস বলে মনে করা হয় । দই ও দুধ প্রতিটি প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে উপকারী । বলা হয়, এক গ্লাস দুধে ৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে ।

২. ডিম খাওয়া উচিত

ডিম প্রোটিনের ভালো উৎসেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন প্রচুর । প্রোটিন আমাদের পেশিতে শক্তি দেয় । তাই, আপনার ডেটার মধ্যে ডিম্বানু অন্তর্ভুক্ত করা নিশ্চিত করুন । ছোট বাচ্চাদের জন্যও ডিম খুব উপকারী ।

৩. মুরগির মাংস ও মাছ আপনার খাবারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে

মাংস ভক্ষণ করার জন্য মুরগির এবং মাছ প্রোটিনের একটি ভাল উৎস । যাদের ফ্যাট খেতে হয় তারা মুরগির মাংস খেয়ে নিতে পারেন । মুরগির মধ্যে উপস্থিত প্রোটিন ঝিনুকও শক্তিশালী করে ।

৪. পুরো শস্য ও ডাল বেশি করে খাওয়া উচিত

গোটা শস্য ও ডাল প্রোটিন সমৃদ্ধ । নিরামিষাশীদের জন্য এই জিনিসগুলি প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর জন্য যথেষ্ট । ডাল প্রোটিনের গুপ্তধন হিসেবেও বলা হয় । গোটা শস্য আমাদের শরীরের মিটকেও এনার্জি প্রদান করে ।

৫. সবজি খান

শাকসবজি প্রোটিনের সর্বোত্তম উৎস । মটর, ফুলকপি, মাশরুম, পালং শাক এমন কিছু সবজি, যার মধ্যে প্রোটিন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । তাই যদি সঠিক প্রোটিন নিতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার খাবারে সবজি নিন ।

৬. আপনার খাবারে সয়াবিন অন্তর্ভুক্ত করুন

প্রোটিনের সর্বোত্তম উৎসের মধ্যে সয়াবিন গণনা করা হয় । সোয়াবিন প্রতি 100 গ্রামে রয়েছে 43 গ্রাম প্রোটিন । তাই তো সয়াবিন খাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রোটিন এড়িয়ে চলাই ভালো উপায় ।

৭. চিনাবাদাম খাওয়া নিশ্চিত করুন

শীতের মরশুমে বাদাম খেতে সকলেই ভালবাসেন । চীনাবাদাম আমাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে, কারণ প্রতি 100 গ্রাম চিনেবাদামের মধ্যে প্রায় ২৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় ।

৮. রাজমা খান

রাজমা ছাড়াও ভাল পরিমাণে প্রোটিন থাকে । যাঁরা মাংস খাবেন না, তাঁদের জন্য রাজমা প্রোটিনের ভাল উৎস বলে মনে করা হয় ।

৯. সম্ভব হলে বাদাম খান

বাদাম, কাশেওনাট, কিশমিশ, পিস্তাচিস, কাজুবাদাম এবং আখরোট এছাড়াও প্রোটিনের একটি ভাল উৎস বলে মনে করা হয় । প্রোটিন ছাড়াও আরও অনেক পুষ্টিগুণ উপযুক্ত পরিমাণে পাওয়া যায় ।