বাচ্চাদের সঠিক খাওয়ার অভ্যেস কীভাবে পাবেন

Make Good Healthy Eating Habits In Kids in bengali
Make Good Healthy Eating Habits In Kids in bengali

প্রায়ই অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন, তাঁদের সন্তান ঠিকমতো খায় না । আসলে বেশির ভাগ অভিভাবকই নিজেরাই এর জন্য দায়ী । তারা সময়মতো সন্তানদের সঠিক খাদ্যভ্যাস রাখেন না । এখানে প্রথমে একটি উদাহরণ এবং তারপর কিভাবে এটি সংশোধন করতে হয়:

৮ বছরের মেয়ে জিয়া একসময় নানা জিনিস খেতে পছন্দ করতেন । কিন্তু এখন খাবারের নাম তার মুড খারাপ করে দেয় । এর কারণ তার বাবা-মা, যে সব সময়ে খাওয়ার জন্য তার ওপর চাপ বজায় রাখে । স্কুলে যাওয়ার সময় মা জোর করে ওকে কিছু খাইয়ে দেয় । ওর টিফিন নিয়েও এত খাবার থাকে যে ও শেষ করতে পারে না । যখনই সে বাড়ি ফেরে, মা আবার তার খাবার দেয় । বাবা আরও প্রশ্ন করেন, তিনি কতটা খেয়েছেন, কী খেয়েছেন, অফিস থেকে ফিরলে কী খেয়েছেন । সে কারণেই সে খাবার থেকে সরে যাচ্ছে ।

অধিকাংশ শিশুই এই সমস্যায় জর্জরিত । কর্মজীবী বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে পুরো সময় দিতে পারছেন না, তাই তাদের সব মনোযোগ সন্তানের খাদ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে । ত্রুটি ঠিক শুরু হয় এখানে । তিনি খাবারের জন্য সন্তানের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ রাখেন, তাই সন্তানের মন খাবার দ্বারা সুচিত হয় ।

সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা খাদ্য প্রয়োজন, সে সম্পর্কে বাবা-মায়েদের নির্ভুল হতে হবে । সাধারণত, ছ ‘ মাস খাদ্যশস্য দেওয়ার পর শিশুকে খাওয়ানো হলেও এখন পেডিয়াট্রিশিয়ানরা চার মাস বয়স থেকে শিশুর জন্য সলিড ডায়েট সুপারিশ করেন । ৪ মাস বয়স থেকে সন্তানের মধ্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি । শুরুর ৩ মাস শিশুকে পুরোপুরি বুকের দুধের উপর নির্ভরশীল রাখে । ৪ মাস হলে দুধ ছাড়াও তাকে ফলের রস ও একটু দানা দেওয়া শুরু করুন ।

ছোট বাবল ডায়েট কী রকম হওয়া উচিত

✔ ৪-৬ মাস বয়স থেকেই ডাল জল, সেমোলিনা খেয়ার, ভর্তা কলা, সেদ্ধ আপেল, কমলালেবু খাওয়ালে বাচ্চা সুস্বাস্থ্যের মধ্যে থাকে ।

✔ চাল খাদ্যশস্য দিয়ে চালু করা যায় । ভাত যোগ্য এবং সর্বনিম্ন এলার্জি উপাদান আছে । পাঁচ থেকে ছ ‘ মাস অন্তর তাকে ভেজিটেবল স্যুপ, ভাতের ডাল জল, বা চকচকে পাতলা খিচুড়ি দেওয়া যেতে পারে ।

খাবারের প্রতি আগ্রহ বজায় রাখতে নতুন রেসিপির সঙ্গে আড়াই বছরের বাচ্চাকে খাওয়াতে ✔ । তাকে দিনে তিনবার কিছু সলিড ফুড দিন । শিশুর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তখনই গড়ে ওঠে, যখন সময়মতো সঠিক পরিমাণে খাবার দেওয়া হয় । সব সময়ে খাওয়া ভাল নয় ।

✔ ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী বাচ্চাকে রাতে দুধ পান করতে দেবেন না । এতে সকালে ও সন্ধ্যায় দুইবার দুধ দিন । ৩ বছর বয়স পর্যন্ত তিন বার করা যেতে পারে, কিন্তু দুধের উপর ক্রমে তাঁর নির্ভরতা কমানো উচিত । একে চিন খাওয়া অভ্যাস করুন এবং দুধের পরিমাণ কমিয়ে ফেলুন । বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ডোজ বাড়ান । প্লেটে খাবার রাখুন । খাবারে অল্প পরিমাণে ডাল, ভাত, সবজি, কুডস, রোটিস ইত্যাদি রাখুন । তা করতে গিয়ে শিশুটি নিজের গায়ে খাওয়া-দাওয়া করতে শেখে । অনেক সময় মায়েরা খাবার ফেলে দেবেন বলেই শিশুকে নিজের গায়ে খেতে দেয় না । কিন্তু সেটা করা ঠিক নয় ।

✔ তাদের স্ন্যাকস ও জং ধরা খাবার অন্তত দিন । খাবারের মধ্যে অন্তত ৩-৪ ঘন্টার ব্যবধান রাখুন । তার ক্ষুধা অনুভব করা জরুরি । খিদে পেলে নেওয়া খাবার স্বাস্থ্যকর ।

✔ প্রায়ই অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, তাঁদের সন্তান ডাল-সবজি খায় না । সন্তানের মধ্যে সব কিছু খাওয়া-দাওয়া করা যায় । হ্যাঁ, অনেক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হতে পারে ।

✔ এমন শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়, যারা খাদ্যশস্য, ফাইবারযুক্ত ফল ও সবজি খায় না । যা তাদের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে । অভিভাবকেরাও মনে করেন, তাঁদের সন্তান কিছু খায় না, অথচ সন্তান তার চাহিদা খায় । সন্তানের সম্পূর্ণ শারীরিক বিকাশ তখনই সম্ভব, যদি তিনি সুষম আহার গ্রহণ করেন । ৩ থেকে ১০ বছরের শিশুর ওজন সারা বছর ২ কেজি এবং দৈর্ঘ্য বেড়ে ২ ইঞ্চি মানে তার পুষ্টি নিরাময় হয় ।

✔ সময়মতো সন্তানকে স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়াই শ্রেয় ।
বাড়িতে শৃঙ্খলা আবশ্যক

✔ সিঙ্গল পেরেন্টস-এর প্রচেষ্টা সন্তানের মধ্যে খাওয়ার সঠিক অভ্যেস ইনইউজ করতে পারে না । এ জন্য পুরো পরিবারকে সহযোগিতা করতে হবে । এমন নয় যে বাবা-মা তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করুক, কিন্তু দাদা তার চকলেট বা কোল্ড ড্রিঙ্ক পূরণ করে রাখে ।

✔ অনেক সময় শিশু আসলে একগুঁয়ে হওয়ার কারণে কিছু খায় না এবং খাওয়ার বদলে কোল্ড ড্রিঙ্ক বা চকলেট চায় । এই অভ্যেস প্রচার করবেন না বা সন্তানের একগুঁয়ে মনোভাব পূরণ করুন । দু ‘-তিন ঘণ্টা খাবারের পর তাঁকে যা যা জোর দিচ্ছে, তা দিতে পারেন । কিন্তু তার অভ্যেস হয়ে যাক না ।

✔ মিষ্টি ও আঠালো খাবার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে । চকলেট, টোফিয়ে, চুংগাম, কোল্ড ড্রিঙ্ক দাঁতের সঙ্গে সংযুক্ত, জীবাণু সৃষ্টি করে । এতে দাঁতে কৃমি সৃষ্টি হয় ।

✔ খুব বেশি টফি বা বিস্কুট খেলে শিশুদের অ্যানিমিয়া হতে পারে, ফাইব্রিয়াস খাবারের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে । ক্রমে তার শারীরিক বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়, তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় না এবং ওজন কমে যায় ।

✔ শিশুদের সঙ্গে খাবার জোর করে না । শৃঙ্খলা মানে না তাদের খাওয়াতে বাধ্য করা । তা করতে গিয়ে বাচ্চারা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ।

এভাবে বাবা-মায়েরা যদি এখানে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলেন, তাহলে তাদের সন্তান ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলবে এবং স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে ।