ডায়াবেটিসে গ্লুকোমা সর্বোচ্চ ঝুঁকি

highest risk of glaucoma in diabetes

নয়াদিল্লি। ডায়াবেটিক রোগীদের ‘ সাইলেন্ট হামলাকারী ‘ গ্লকোমা দ্বারা ধরা পড়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি এবং এই রোগের আক্রমণ সম্পর্কে মানুষ সচেতন না হওয়া পর্যন্ত অন্ধত্বের খুব কাছাকাছি।

অধ্যাপক (পদ্মশ্রী), অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এর চক্ষু বিশেষজ্ঞ জেইভান সিং তিতিয়াল ইউনিসংলাপে জানান, গ্লুকোমা রোগটি একটি নীরব আক্রমণ। ডায়াবেটিক রোগীরা এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবণ। এই রোগটিও জেনেটিক হতে পারে। হাইপারটেনশন, উদ্বেগ, অবসাদ, হার্ট এবং লাইফস্টাইল ডিজিজের কারণেও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। টাইপ দুই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুরা গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে খুব বেশি থাকে কারণ তারা ইনসুলিন নির্ভরশীল এবং দীর্ঘ দিন ধরে এই রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ডায়াবেটিক রোগীদের সুগার লেভেলের পাশাপাশি চক্ষু পরীক্ষার ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ করা বাধ্যতামূলক। “

প্রথম ভারতীয় চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টিটিয়াল লাইভ কর্নিয়া টারইয়ারএ সার্জারি সম্পাদন করে বলেন, “বিশ্বব্যাপী অন্ধত্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় কারণ গ্লুকোমা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা নয়। যেহেতু কোনও টার্গেট নেই, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর অন্ধত্বের প্রবেশপথে পৌঁছে যাওয়ার পরেই চিকিৎসা শুরু হয় । দুঃখের বিষয়, এই রোগে যে শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা সারিয়ে তোলা যায় না, কিন্তু যেখান থেকে কবলে আসে, তা প্রতিরোধ করতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ৯-দশ বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি প্রতি ছয় মাস অন্তর চোখের পরীক্ষা করাতে হবে যাতে গ্লুকোমা, মতিয়া বাঁধসহ কোনো চোখের রোগের কবলে না পড়েন তিনি। যে সমস্ত ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন, তাঁরাও 45-50 বছর বয়সে একবার গ্লকোমা-র জন্য প্রদর্শিত হবেন। “

দার্শনিক ভঙ্গিতে চোখের সামনে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখার রহস্য তিনি তৈরি করেছেন, ‘ ঈশ্বর মানবদেহকে একেবারে অনন্য ভাবে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু চোখ অন্য কিছু। চোখে সত্যকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে যদি দুর্বলতা থেকে থাকে, তা হলে এই রোগ সম্পর্কে খোলামেলা কথাও বলা হয়। প্রেম, ভয়, বেদনা এসব চোখ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। বিপদের মুহূর্তে চোখের পাতা দিয়ে চোখ বুজে, চোখের পলকে ‘ আঁখে ‘ করে দেখিয়ে হৃদয়ের অনুভূতিও করে ফেলেন তাঁরা। চোখের দিকে তাকিয়ে অনুমান করা যায়, শরীরে কী চলছে। “

গ্লুকোমা সম্পর্কে মানুষের স্থূল অজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মানুষ গ্লুকোমা এবং তার গুরুতর পরিণতি সম্পর্কে অজ্ঞ, তাই অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে ‘ লাইট ‘ দিয়ে প্রাণ হারাতে হয়। সেখানে বড় মাপের সচেতনতা প্রচার করার প্রয়োজন রয়েছে। এইমস-এ এ দিকে কাজ করা হয়েছে এবং সমীক্ষা রিপোর্টও বেরিয়ে আসতে চলেছে। মেডিসিন বিভাগে বেশ কয়েকজন ডায়াবেটিক রোগীকে প্রদর্শিত করা হয়। এরমধ্যে ২০ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিক রেটিলাপ্যাথি পাওয়া গেলেও তা জানা যায়নি। একই ভাবে অন্যান্য চোখের সমস্যার জন্য ১৬-১৭ শতাংশ রোগীর বয়স 50, যাঁরা চক্ষু বিভাগে এসেছিলেন, তাঁরা রেটিনা-তে ডায়াবেটিক পরিবর্তন পেয়েছেন এবং এ বিষয়ে জানতেন না। “

কেরাতোলাস্টি, রিফ্লেক্টিভ সার্জারি, স্টেম সেল টার্ইয়ারএ ইত্যাদি এলাকায় বিস্ময়কর যোগের জন্য 2014 সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত অধ্যাপক তিতিয়াল বলেন, দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী বছরগুলিতে প্রত্যেক তৃতীয় ব্যক্তির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষ হার্ট এবং যকৃতের উপর ডায়াবেটিসের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনেক সচেতন, কিন্তু এটি দ্বারা সৃষ্ট গ্লুকোমা মত চোখের রোগ সম্পর্কে অজ্ঞ। “

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের চোখ অপারেশন করে ডক্টর তিতিয়াল বলেন, ‘ ‘ কা-এর পিছনে সিলকারি টিস্যু রয়েছে, যা দিয়ে অ্যাবোইজ হিউমার ফ্লুইড সরিয়ে রেখে সরিয়ে দেওয়া হয়। ইরসেস চোখের ভেতরের অংশে চলে যায়। এই প্রক্রিয়া চোখকে সুস্থ রাখে, চোখে আর্দ্রতা রাখে। কিন্তু, এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না ঘটলে, চোখের উপর ইন্টেনকুলার প্রেসার বাড়তে শুরু করে।

চোখের পিচকারি টিস্যুও ডিটেবল হতে শুরু করে, যার ফলে অ্যাকুইজ হিউমার-এর প্রবাহ কমে যায়। এর ফলে অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয় যা মস্তিষ্কে ভিজুয়াল সিগন্যাল পাঠায় এবং চোখের পলকে দুর্বল করে দেয়। খেয়াল না করলে চোখে চাপ বেড়ে যায় এবং একুইওস হাস্যরসের তরলের প্রবাহ থেমে যায়। শুরুতে একটা ঝাপসা চেহারা থাকে এবং সেখানে যখন নিরাময় হয় না তখন অন্ধত্ব থাকে। “

তিনি বলেন, গ্লুকোমা জন্মগত ক্ষেত্রে দেখা যায়। সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে স্টেরয়েড, হাঁপানি এবং আর্থারাইটিস নেওয়ার মতো রোগও প্রবণ।

শুরুতে শনাক্তকরণ জরুরি। বিলম্বিত হলে পুরো চিকিৎসা কঠিন। চোখে বেড়ে যাওয়া চাপ কমাতে ওষুধ ও আই ড্রপ দেওয়া হয়। ওষুধ নিরাময় না হলে লেজার সার্জারি থেকে অপটিক্যাল নার্ভ সংশোধন করে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক সিনিয়র অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে সমন পাঠানো অধ্যাপক টিটিয়াল বলেন, ‘ দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের চোখে এই রোগের প্রভাব রয়েছে, তাই নিয়মিত চেক প্রয়োজন হয় না। “

(ডঃ আশা মিশ্র উপাধ্যায়)