চাহার নেটে প্রায় ‘ এক লক্ষ বল ‘ ছুঁড়ে দেন, তার পরে টি-২০-তে যায় ‘ ইনফ্রাস্ট্রাকচার রেকর্ড ‘, বাবা প্রকাশ

deepak chahar t20 hat trick wicket record
deepak chahar t20 hat trick wicket record

নয়াদিল্লি: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৃতীয় ও ফয়সালার টি-২০ আন্তর্জাতিকে হ্যাটট্রিক করে রেকর্ড গড়লেন ফাস্ট বোলার দীপক চাহার-এর বাবা লোমেন্দ্রসিং চাহার ৷ তিনি জানিয়েছেন, নেটে অন্তত এক লাখ বল থ্রো করার পর এই রকম পারফর্ম করতে পেরেছিলেন তাঁর ছেলে ৷ ।

অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর কর্মচারী লোমেন্দ্র সিং বহুদিন ধরেই দিনের পর দিন অপেক্ষা করছিলেন । তাঁর ছেলে দীপক অবশেষে ‘ জাদুকরী ‘ পারফর্ম করলেন যা আগ্রা থেকে ঘাসের উইকেটে শুরু ।

যে মুহূর্তগুলি লোমেন্দ্র সিংহ ও তাঁর ছেলে সব সময় মনে রাখবে নাগপুরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচের সময় সেখানে 3.2 ওভারে সাত রানে ছয় উইকেট তুলে নেন দীপক । এমন পারফরম্যান্সের আগে নেটে অন্তত এক লাখ বল আগেই করে দিতেন লোমেন্দ্র সিং । এখন আমার মনে হচ্ছে, যে স্বপ্নটা আমরা দু ‘ জনেই লালন করি, সেটা ধীরে সুস্থে উপলব্ধি করছি ।

নিজের চমৎকার সুইং বোলিং নিয়ে হায়দরাবাদের ব্যাটিং অর্ডারকে বিধ্বস্ত করে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে আসেন দীপক । রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক, ১০ রানে আট উইকেট তুলে নিয়ে হায়দরাবাদ টিমকে গাদা করে তুলেছে ২১ রান । ঘরোয়া ক্রিকেটে ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিওর মধ্যে তার অভিনয় ।

ঘরোয়া ক্রিকেটে একে একে শুরু করেন দীপক ৷ রঞ্জি ট্রফি জয়ী রাজস্থানের 40 উইকেট তুলে নেন তিনি ৷ কিন্তু আগামী কয়েক বছরে চোটের কারণে তাঁর অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ । লোমেন্দ্র সিং বলেন, “ক্যারিয়ারের জটিল পর্যায়ে তিনি আঘাত পেয়েছেন । ইনজুরি সময়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ ।

ন্যাচারাল সুইং বোলার চাহার বুঝেছিলেন, কয়েক বছর আগে রাইজিং পুনে সুপার দৈত্যকার দলে যখন মহেন্দ্র সিংহ ধনিকে দেখতে পান, তখন সীমিত ওভারের ক্রিকেট ও জিনিস পাল্টে তিনি সুযোগ পেতে পারেন । ধায়ানি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে গত দু ‘ মৌসুমে চাহর চমৎকার ব্যবহার করেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এই ফাস্ট বোলারকে জাতীয় প্রতিপক্ষকে তৈরি করার জন্য ।

2018 আইপিএল-এ ১০ উইকেট তুলে নেওয়ার পর এ বছর চাহার ২২ উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডে ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে স্ট্যান্ডবাই প্লেয়ারদের মধ্যে ছিলেন । প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার দীপ দাশগুপ্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে চাহার-কে অনেক খেলতে দেখে বিশ্বাস করেন, এই পরিবর্তন এসেছে আইপিএলে 2019 ।

দীপক সবসময় লাল বল সুইং করতে জানত বলে জানান দাশগুপ্ত । কিন্তু 2018 সালে ডোয়েন ব্রাভোর না থাকায় পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভারে বাড়তি দায়িত্ব তুলে দেন মহেন্দ্র সিং ধাগিনী । টার্নিং পয়েন্ট ছিল ।

প্রাক্তন টেস্ট উইকেটকিপার বললেন, সুইং-ফ্রেন্ডলি পরিস্থিতি না হলেও তিনি বাটি শিখেছেন । ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে ইয়ারকার কাছে শিখেছি ও বলটা মন্থর করে ফেলে । আগ্রা থেকে চাহার পরিবার প্রথমে রাজস্থানের গঙ্গানগর এলাকায় বসবাস করেন যেখানে লোমেন্দ্র সিং ভারতীয় বায়ুসেনার হয়ে কাজ করেন ।

বললেন, আমি যখন ভারতীয় বায়ুসেনায় চাকরি ছাড়লাম, তখন জানতাম আমি কী করছি । আমার ১২ বছরের ছেলেকে খেলতে দেখে আমি জানতাম ওর সম্ভাবনা আছে । এতে কিছু প্রাকৃতিক সক্ষমতা ছিল ।

লোমেন্দ্র সিং বললেন, আমি ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার বাবা অনুমোদন দেয়নি । তাই আমার ছেলে যখন এল, আমি চেয়েছিলাম ওর স্বপ্নকে উপলব্ধি করতে যা আমারও স্বপ্ন ছিল । আমার কোনও নিয়মমাফিক কোচিং ডিগ্রি না থাকলেও দীপক গাইড করতে শিখেছি ।

দীপকের বাবা তাঁর বাঁচিয়ে দেওয়া টাকা দিয়ে নিজের শহর আগ্রায় একটি ঘাসের ও কংক্রিটের পিচ তৈরি করেন যেখানে তাঁর ছেলে ট্রেনে উঠতে পারে । লোকচন্দ্র সিংহ বলেন, কঠোর প্রশিক্ষণের কারণে অষ্টম হওয়ার পরে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারিনি । তখন দিনে কম করে ২৪ ঘণ্টা সময় লেগেছে ।

ট্রেনিং, জিম, বিশ্রাম এবং তারপর সুস্থ হয়ে ওঠা । সে অবশ্য গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে । নিয়মমাফিক ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তিনি কোচিং করালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে লোমেন্দ্র সিংহ বলেন, আমার প্রিয় বোলার ম্যালকম মার্শাল এবং আমি ডেল স্টেইনকেও পছন্দ করি ।

আমি তার ভিডিও দেখেছি, তার কব্জির অবস্থান, ধারাভাষ্যকারদের কথা শুনে এবং তা থেকে যা শিখেছি তা দিয়ে দীপকের সঙ্গে কাজ করেছি ।

দীপকের বয়স ২৭ বছর এবং তাঁর বাবা বিশ্বাস করেন, ফাস্ট বোলারের ছয় থেকে সাত বছরের শীর্ষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং টেস্ট ক্রিকেটে খেলার সুযোগ থাকবে । তিনি প্রথাগত ফরম্যাটে খেলার সুযোগ পেলে তা চমত্কার হবে বলে জানান তিনি ।