স্তন্যপান থেকে শিশুর স্বাস্থ্য উপকারিতা

Breastfeeding Benefits For Baby in Bengali
Breastfeeding Benefits For Baby in Bengali

স্তন্যপান করালে মা ও সন্তানের মধ্যে মধুর সম্পর্কের শুরু । এমনকি জন্মের আগে মা ও শিশুর মধ্যে গভীর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও স্তন্যপান করানোর পর সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে । মায়ের কাছ থেকে অমৃত ধারা জীবনে নতুন করে কয়াল প্রস্ফুটিত করে তোলে । শিশু সংগ্রামের সুযোগ পায় । সংসার ও সাংসারিক অভিঘাত থেকে সংঘাত । ব্রেস্ট মিল্ক শিশুর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে ।

অনেক সময় বলা হয়, মা যদি দুধ পান করেন । অর্থাৎ, বুকের দুধ পান করলে কোনও ব্যক্তির কিছু করার ক্ষমতা থাকে । স্তন্যপান মা ও শিশু উভয়ের জন্যই উপকারী । তাতে দু ‘ জনকেই কিছু একটা দেয় । শিশুর পুষ্টি পায় । এটি শিশুর জন্য জীবন রক্ষাকারী কাজ হিসেবে কাজ করে । কিন্তু মায়ের কাছেও এর থেকে উপকার হয় । সে অনেক গুরুতর অসুখও এড়াতে পারে ।
শিশুর জন্য অমৃত স্তন্যপান

বলা হয়, জন্মের ছয় থেকে আট মাস পর্যন্ত শিশুর জন্য বুকের দুধ সবচেয়ে ভালো । বুকের দুধ সহজে হজম হয় । এতে রয়েছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক রাসায়নিক । ড. J.P. হাসপাতালের লেডি প্যাথলজিস্ট ডা. রেণু জৈন বলছেন, ‘ মায়ের দুধে শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি থাকে । অতএব, এটি পেটে ব্যাঘাত ঘটায় না । সেই সঙ্গে শিশুকে সব ধরনের অ্যালার্জি থেকেও দূরে রাখে ।

স্তন দুধও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । যে সব শিশুর পর্যাপ্ত স্তন দুধ পাওয়া যায় না, তাদের নানা ধরনের রোগ হতে পারে । তাদের তুলনামূলক কম বুদ্ধির বিকাশ হয়েছে । শিশুর পূর্ববৈবাহিক হলে তার অন্ত্রের রোগ হতে পারে । বুকের দুধও রক্ষা করে । এছাড়াও স্তন খাওয়াতেও হাঁপানি ও কানের রোগ সৃষ্টি হয় না । রক্তের ক্যানসার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও কমে যায় ।

শিশু রোগ এবং হোম প্রতিকার সনাক্তকরণ

কতদিন শিশুকে দুধ খাওয়াতে হয়, প্রায়ই মহিলারা তা জানেন না । কৈলাশ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ H.P. সিংহ । সিংহ বলছেন, “জন্মের অব্যবহিত পরেই স্তন্যপান শুরু করা উচিত । এই সময়ে শিশু শিখে নিতে পারে কী ভাবে ব্রেস্ট স্যাথিগুলো সবচেয়ে দ্রুত খাওয়াতে হয় । এটি প্রয়োজনীয় কারণ প্রসবের অব্যবহিত পরে স্তন থেকে হলুদ তরল কোলোস্ট্রাম নির্গত হয়, যা শিশুকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে । এটি একধরনের টিকা । শিশুকে যদি খাওয়ানো হয়, তবে তার জন্য উপকারী ।

যেসব নারী ডেলিভারি সেকসপিয়র আছে তারাও দুধ খেতে পারেন । হ্যাঁ, অ্যানেস্থেশিয়ার প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন । মাথা খাওয়ানোর সময় শিশুকে সোজা রাখা উচিত । এছাড়া রাতে শুয়ে পড়া এড়িয়ে যাওয়া এবং খাওয়াদাওয়া করা । শিশুকে বের করে একবার পান করলে তা সঠিক উপায় নয় । দুধ থেকে তা দূর করতে হলে মুখের কিনারায় আঙুল রেখে তা সরিয়ে ফেলা উচিত ।

অনেক সময় বুকের দুধ শক্ত হয়ে যায় । সন্তানের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না । খাওয়াদাওয়া দ্রুত করা উচিত । যদি এর. কোনও ক্ষেত্রে বাড়তি দুধ সরিয়ে রেফ্রিজারেটরে মজুত করা যায় । ফ্রিজ বন্ধ না হলে ২৪ ঘণ্টাই দুধ নষ্ট হয় না । প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর স্তন্যপান করানো উচিত । ড.. সিং-এর মতে, একসময় তিনি ছিলেন । দুধ উভয় স্তন থেকে অন্তত 10 থেকে 15 মিনিট পর্যন্ত করা উচিত ।

শিশুর জন্মের পর অন্তত ছয় মাস দুধ খাওয়ানো উচিত । সম্ভব হলে দু ‘ বছরের জন্য ব্রেস্ট খাওয়াদাওয়াও করা উচিত । কিন্তু, একই সঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্যও দেওয়া উচিত । মা অসুস্থ হলেও স্তন্যপান করানো উচিত । সাধারণত, সহজ রোগে দুধ খাওয়ানো শিশুর কোনও ক্ষতি হয় না । হ্যাঁ, রোগটি গুরুতর হলে আপনার ডাক্তারের মতামত চাওয়া উচিত ।
স্তন খাওয়ানোর উপকারিতা মায়ের কাছে স্বাস্থ্য

মহিলাদের স্তন্যপানের থেকেও অনেক উপকারিতা রয়েছে । এর মাধ্যমে তাদের গর্ভসঞ্চার-পরবর্তী অভিযোগের স্বাধীনতা দেয় । প্রসবের পর অন্যতম সমস্যা হল, মহিলাদের অত্যধিক রক্তক্ষরণ । শিশুকে সঠিক পরিমাণে দুধ খাওয়ানো হলে সমস্যা দূর হয় ।

এছাড়া প্রসবের পর অনেক মহিলাই হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি করেন । হেলথ কেয়ার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ও জিমন্যাস্টিকস । এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং স্তন্যপান অব্যাহত রাখা উচিত ।

সেই সঙ্গে ওজন বাড়ার সমস্যাও কমে । স্তন্যপান করালে অনেক মারাত্মক রোগের নিরাময় হয় । স্তন্যপানের মহিলাদেরও স্তন বা জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি কম । এছাড়া স্তন্যপানের ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক গর্ভনিরোধক ।

• খাওয়াদাওয়া একটা সময়ে দু ‘ টো স্তন থেকে অন্তত ১০-১৫ মিনিট করা উচিত ।
• রাতে খাওয়াদাওয়া এড়িয়ে চলুন ।
• শিশুর জন্মের পরে অন্তত ছ ‘ মাস দুধ খাওয়ানো উচিত
• সম্ভব হলে দু ‘ বছরের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং করা উচিত ।

শিশুর স্তন্যপান পদ্ধতি

প্রত্যেক শিশুর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব রয়েছে । একইভাবে তার স্তন্যপানের ধরন অনন্য হতে পারে ।

বরকতদা নার্সিং স্টাইল: বরকতদা স্টাইলে শিশু ১০ থেকে কুড়ি মিনিট একটানা দুধ পান করে । এ ধরনের শিশুরা অনেক সময় কষ্ট পায় । চিন্তা করবেন না আপনার স্তনবৃন্ত খুব তাড়াতাড়ি গড়িমসি হয়ে যাবে ।

উৎসাহী অকার্যকর: যদি শিশু খুব উৎসাহের সাথে স্তন ধরা দেয়, কিন্তু মুখে তা নিতে না পারার কারণে কান্নাকাটি শুরু করে, তাহলে তা ‘ উত্তেজিত অকার্যকরী ‘ । খুব ধৈর্য ও স্নেহ দিয়ে তা এনে দেওয়ার পরই দুধ দেওয়া উচিত ।

অনীহার: এমন বেঁচে থাকার জন্মের চার-পাঁচ দিন পরেও দুধ পানের ক্ষেত্রে উৎসাহ নেই । তাদের জোর করবেন না । তাঁরা পুরোপুরি প্রস্তুত হলে শখ করে দুধ পান করবেন ।

গার্মেট: এ ধরনের শিশুরা মুখে স্তনের দখল নিয়ে খেলে । সামান্য দুধ পান করলে শিশুর পুরো স্বাদ স্বাদ হয় অনেকের । তাঁরা মনে করছেন, খাবার উপভোগ করতে পারেন । তাদের খাবার ভোগ করতে দিন । ভাইয়ের নিজস্ব স্টাইল আছে ।

রেস্টর: এ ধরনের শিশুরা কয়েক মিনিটের জন্য দুধ পান করে এবং কয়েক মিনিট বিশ্রাম নেয়, অনেকে এমনকি ১৫ মিনিটের একটি ঝক্মও নেয় । এমন শিশুদের খাওয়াতে সময় লাগে । ওদের বল না । তাদের নিজের মত করে দুধ পান করতে দিন ।