বিদর্ভ: কীভাবে নিজেদের ঘরের ঘাসের মধ্যে হারতে হল বিজেপিকে? অব্যবহৃত ফড়ণবীস ফ্যাক্টর

BJP Loose at home in maharastra in bengali
BJP Loose at home in maharastra in bengali

মহারাষ্ট্রে বিজেপি নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে পেরেছে, কিন্তু দলের নেতারা যা আশা করেছিলেন, তা অর্জন হয়নি । মহারাষ্ট্র বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-শিবসেনা জোট 161 আসনে জিতলেও জোট হারিয়েছে ২৪টি আসন । বিজেপি একাই 122 আসন থেকে এসেছে 105 ।
মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রয়োজনীয় আসন পেতে পারেনি । মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে প্রয়োজনীয় আসন পেতে পারল না বিজেপি । |

মহারাষ্ট্রে বিজেপি নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে পেরেছে, কিন্তু দলের নেতারা যা আশা করেছিলেন, তা অর্জন হয়নি । মহারাষ্ট্র বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-শিবসেনা জোট 161 আসনে জিতলেও জোট হারিয়েছে ২৪টি আসন । বিজেপি একাই 122 আসন থেকে এসেছে 105 ।

যেটা সবচেয়ে দুঃখজনক ছিল তা হল, কেসর পার্টির দুর্গ হারাল বিদর্ভ ।

মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর বিদর্ভ অঞ্চল নিয়ে একটি নির্বাচনী বিশ্লেষণ চালায় ইন্ডিয়া টুডে-র ডেটা ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (দিউ) । আমরা পেয়েছি, বিদর্ভ অঞ্চলে বিজেপি ১৫টি আসন হারিয়েছে যা আগে থেকেই ছিল ।

বিজেপি 44 থেকে ২৯

62 বিধানসভা আসন নিয়ে মহারাষ্ট্রের পূর্ব অংশ বিদর্ভ । এ বার বিজেপি এই অঞ্চলের ২৯টি আসনে জিতলেও গত বিধানসভা নির্বাচনে 44 টি আসনে জয়ী হয়েছে । অর্থাৎ বিদর্ভ অঞ্চলের ১৫টি আসনেই হেরে গিয়েছে দল ।

আসন নিয়ে মাইক্রো-অ্যানালিসিস করে দেখা যাচ্ছে, গত নির্বাচনে জয়ী বিদর্ভ ১৯ টি আসন হারিয়েছে বিজেপিকে । তবে 2014 সালে হারিয়ে যাওয়া তিনটি আসন জিতেছিল সে । এমনিতেই বিদর্ভ অঞ্চল বিজেপির কাছে মোট ১৫টি আসন ক্ষতির সম্মুখীন ।

বিজেপির মিত্র শিবসেনাও বিদর্ভ চারটি আসনে জিততে পেরেছে । 2014 সালে মাত্র চারটি আসন জিতেছিল শিবসেনা ।

দিউ জানান, কংগ্রেস ও এনসিপি-র বিরোধী জোট এ বার বিদর্ভ জিতেছে । 2014 সালে কংগ্রেস বিদর্ভ অঞ্চল থেকে ১০টি আসন জিতলেও এবার কংগ্রেসের আসন বেড়ে হল ১৫ । এ বার ৬টি আসনে জিতে 2014 একটি আসনে জিতেছিল এনসিপি ।

2014 সালে বিদর্ভ নির্বাচনে দু ‘ জন স্বতন্ত্র জয়ী হলেও এ বার পাঁচ জন নির্দলীয়রা এই অঞ্চল থেকে জয়ী হয়েছেন । এছাড়া বিদর্ভ অঞ্চল থেকে স্ব-সম্মান পার্টি ১টি আসনে জয়ী হয়েছে এবং খোঁচা জনশক্তি পার্টি (পিজেপি) ২ আসনে জয়লাভ করেছে ।

শুধু আসন নয়, গত বার বিজেপি যে ভোট পেয়েছে, তার পার্থক্যও এ বার নেমে এসেছে ।

44 যে সব আসনে বিজেপি জিতেছিল 2014 বিদর্ভ, তার সব ক ‘ টিতেই জয়ের গড় মার্জিন ছিল 14.1 শতাংশ । যেখানে কংগ্রেস ১০টি আসনে গড়ে 5.6 শতাংশ ব্যবধানে জিতেছে ।

2019 সালে বিজেপির জয়ের গড় মার্জিন কমে দাঁড়ায় 11.8 শতাংশ, যেখানে কংগ্রেসের জেতার গড় মার্জিন বেড়ে হয় 10.8 শতাংশ । এই মাঠে এনসিপি-র গড় ব্যবধানে জয়ের ব্যবধান স্থিতিশীল থাকল 7.41 ।

বিদর্ভ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিদর্ভ বিজেপির দুর্গ ও গৃহ অঞ্চল । একই এলাকা থেকে আসেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ । এলাকা থেকে আরও অনেক মন্ত্রীও আসেন । একই অঞ্চল থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী ।

নাগপুর বিদর্ভ অঞ্চলের বৃহত্তম জেলা । 2014 সালে নাগপুরে ১২টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জিতেছিল বিজেপি । এ বার এই ১২টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬টিতেই জয়ী হয়েছে দল । বাকি ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতে কংগ্রেস, ১টি এনসিপি ও ১জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ।

এই অঞ্চলে এত বড় পরাজয় অবশ্যই বিজেপিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ।

কিন্তু বিদর্ভ অঞ্চলে এই বড় পরাজয়ের কারণ কী?

গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই অঞ্চলে রাজনৈতিক আন্দোলনের দাপট রয়েছে ।

2014 সালে এনসিপি-র বর্ষীয়ান প্রফুল্ল প্যাটেলকে পরাজিত করার পর বিজেপির থেকে সাংসদ হন সাকোলির নানা পটলে । গত জুনে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তাঁর সংসদীয় সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন । এ বার কংগ্রেস তাঁকে মন্ত্রী পরনয়া ফুলুকে বিরুদ্ধে সরব করেছিল ফড়নবিস সরকারকে । ফলে ঘনিষ্ঠ বলে মনে করছেন ফুলকে ফড়নবীশ । এই আসন বিজেপির জন্য খুবই স্পেশাল ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখানে প্রচারে গিয়েছিলেন ।

বিদর্ভ, আর এক বিজেপি মন্ত্রী মরশী আসন হারালেন । কৃষিমন্ত্রী অনিল সুখদেবরাও বনদে-কে পরাস্ত করে আত্মসম্মানহীন দলের দেবেন্দ্র মহাদেবরাও ভুইয়ার ।

রাজকুমার বদ্রলে, ফড়নবিস সরকারে মন্ত্রী, এনসিপি-র চাঁদিপুর মনোহর গোবর্ধন মাত্র 718 ভোটে পরাজিত হন ।

দল বদল করলেন রাজকুমার দিনারাম পাতিয়েন, 2009 সালে বিজেপি থেকে লড়াই করে 2014-এ এনসিপি । 2019 সালে স্ট্রাইকিং ম্যানপাওয়ার পার্টির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন বিজেপি প্রার্থী রমেশ মাভস্কর ।

তিন বারের বিধায়ক তথা মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রী চন্দ্রশেখর ভবকুলে এ বার টিকিট দেওয়া হল না । ভবানীকুলও আসেন তেলি সম্প্রদায় থেকে যার ভালো নম্বর রয়েছে বিদর্ভ । তাঁদের নন-টিকিটিং-এর মাধ্যমে সমাজের ভোটারদেরও প্রভাবিত করেন । ভবানীকুলে গডকড়ীর সমর্থক এবং বিদর্ভ অঞ্চলের এক প্রভাবশালী নেতা । আরও বলা হয়, নির্বাচনী প্রচারে 2014-র মতো সমান অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি নিতিন গডকড়ীকে । এই নির্বাচনে মোট ৩০টি জনসভা করেন গডকড়ী, যার বেশিরভাগই ছিল বিদর্ভ অঞ্চলে, কিন্তু মনে হয় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসেনি ।